জাতীয় অর্থনীতি শক্তিশালীকরণের উদ্দেশ্যে কৃষক, উৎপাদক, কৃষি ব্যবসায়ী ও ভোক্তা সহায়ক কৃষি বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিধান প্রণয়নকল্পে প্রণীত আইন
যেহেতু জাতীয় অর্থনীতি শক্তিশালীকরণের উদ্দেশ্যে কৃষক, উৎপাদক, কৃষি ব্যবসায়ী ও ভোক্তা সহায়ক কৃষি বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিধান প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়;সেহেতু এতদ্দ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইল :-
২। বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থি কোনো কিছু না থাকিলে, এই আইনে-(১) ‘‘কর্মচারী’’ অর্থ কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মচারী;(২) ‘‘কুল চেম্বার’’ অর্থ কৃষিপণ্য সাময়িকভাবে শীতল অবস্থায় সংরক্ষণ করিবার স্থান বা স্থাপনা;(৩) ‘‘কৃষি উপকরণ’’ অর্থ তপশিল-২ এ বর্ণিত কৃষি উপকরণ;(৪) ‘‘কৃষিপণ্য’’ অর্থ তপশিল-১ এ বর্ণিত কৃষিপণ্য এবং প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য;(৫) ‘‘কৃষি বিপণন’’ অর্থ কৃষিপণ্য ও কৃষি উপকরণ উৎপাদক পর্যায় হইতে ভোক্তার নিকট পৌছানো পর্যন্ত পরিবহণ, সংরক্ষণ, শ্রেণিকরণ, প্রমিতীকরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত কার্যাবলি;(৬) ‘‘কৃষি বিপণন অধিদপ্তর’’ অর্থ কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন কৃষি বিপণন অধিদপ্তর;(৭) ‘‘কৃষি ব্যবসায়ী’’ অর্থ ধারা ৭ এর অধীন লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যক্তি;(৮) ‘‘কৃষিভিত্তিক শিল্প উদ্যোক্তা’’ অর্থ কৃষিপণ্য ভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিচালনাকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান;(৯) ‘‘গুদাম’’ অর্থ কৃষিপণ্য ও কৃষি উপকরণ সংরক্ষণের জন্য কোনো দালান, স্থাপনা বা স্থাপনার অংশ;(১০) ‘‘তপশিল’’ অর্থ এই আইনের কোনো তপশিল;(১১) ‘‘প্রজ্ঞাপিত বাজার’’ অর্থ ধারা ৫ এর অধীন ঘোষিত বাজার;(১২) ‘‘প্রজ্ঞাপিত শস্য’’ অর্থ ধারা ১৫ এর অধীন ঘোষিত শস্য;(১৩) ‘‘প্রবিধান’’ অর্থ এই আইনের অধীন প্রণীত প্রবিধান;(১৪) ‘‘ফৌজদারি কার্যবিধি’’ অর্থ Code of Criminal Procedure, 1898 (Act No. V of 1898);(১৫) ‘‘বাজার’’ অর্থ Sate Acquisition and Tenancy Act, 1950 এর section 2(12) এর বিধান অনুযায়ী হাট-বাজার; এবং কৃষিপণ্য, কৃষি উপকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকৃত কৃষিপণ্য ক্রয়-বিক্রয় হয় এইরূপ স্থান, সুপারশপ, শপ বা ওয়েব বেইজড শপও উহার অন্তর্ভুক্ত হইবে;(১৬) ‘‘বাজারকারবারি’’ অর্থ কৃষিপণ্য এবং কৃষি উপকরণের ক্রয়-বিক্রয়ে মধ্যস্থতাকারী অথবা এতদসংক্রান্ত সেবা প্রদানকারী পাইকারি বিক্রেতা, আড়তদার, মজুদদার, কমিশন এজেন্ট বা ব্রোকার, ওজনদার, নমুনা সংগ্রহকারী, ফড়িয়া বা বেপারী;(১৭) ‘‘বিধি’’ অর্থ এই আইনের অধীন প্রণীত বিধি;(১৮) ‘‘ব্যক্তি’’ অর্থে যে কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, উহা নিবন্ধিত হউক বা না হউক, বাজারকারবারি, গুদাম মালিক, হিমাগার মালিক এবং কৃষি ব্যবসায়ীকে বুঝাইবে;(১৯) ‘‘ভোক্তা’’ অর্থ এইরূপ কোনো ব্যক্তি যিনি পুনঃবিক্রয় ও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য ব্যতিত সম্পূর্ণ বা আংশিক মূল্য পরিশোধে বা মূল্য পরিশোধের প্রতিশ্রুতিতে বা প্রলম্বিত মূল্য পরিশোধের প্রতিশ্রুতিতে বা কিস্তি ব্যবস্থায় কোনো কৃষিপণ্য, কৃষি উপকরণ বা সেবা ক্রয় ও ব্যবহার করেন;(২০) ‘‘মজুত’’ বা ‘‘গুদামজাতকরণ’’ অর্থ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিজস্ব বা ভাড়া করা গুদাম বা হিমাগারে কৃষিপণ্য বা কৃষি উপকরণ সংরক্ষণ;(২১) ‘‘মজুতকারি’’ অর্থ যিনি কৃষিপণ্য গুদাম বা হিমাগারে মজুত করিয়াছেন অথবা গুদাম বা হিমাগার মালিক বরাবর হস্তান্তর করিয়াছেন এবং গুদাম বা হিমাগার মালিক কর্তৃক উক্ত পণ্যের বিপরীতে প্রাপ্তিস্বীকারপত্র বহনকারী বা মজুতকারি কর্তৃক আইনানুগভাবে নিযুক্ত ও স্থলাভিষিক্ত যে কোনো ব্যক্তি;(২২) ‘‘মহাপরিচালক’’ অর্থ কৃষি বিপণন অধিধপ্তরের মহাপরিচালক;(২৩) ‘‘মার্কেট চার্জ’’ অর্থ কোনো প্রজ্ঞাপিত বাজারে কৃষিপণ্যের ক্রয়-বিক্রয় বা ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যস্থতা অথবা এইরূপ ক্রয়-বিক্রয়ের সহিত আনুষঙ্গিক অন্যান্য কার্য তথা ওজন, পরিমাপ, নমুনা সংগ্রহ প্রভৃতি সেবা প্রদানের বিনিময়ে ক্রেতা বা বিক্রেতা কর্তৃক বাজারকারবারিকে প্রদত্ত ধারা ১৬ এর অধীন সরকার কর্তৃক নির্ধারিত কমিশন বা ফি;(২৪) ‘‘লাইসেন্স’’ অর্থ এই আইনের অধীন প্রদত্ত লাইসেন্স;(২৫) ‘‘সরবরাহকারী’’ অর্থ কৃষি উপকরণ বা কৃষিপণ্যের সরবরাহকারী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান;(২৬) ‘‘সুপার শপ’’ অর্থ বৃহদাকারের খুচরা বিক্রয় কেন্দ্র, যেখানে কৃষিপণ্যসহ অন্যান্য বহুবিধ পণ্য ক্রয়-বিক্রয় হয়;(২৭) ‘‘হিমাগার’’ অর্থ কৃষিপণ্য অপেক্ষাকৃত দীর্ঘসময় যান্ত্রিক উপায়ে কৃত্রিমভাবে শীতল অবস্থায় সংরক্ষণ করিবার স্থান বা স্থাপনা।
৪। এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কার্যাবলি হইবে নিম্নরূপ, যথা:-(ক) কৃষি বিপণন তথ্য ব্যবস্থাপনা;(খ) কৃষিপণ্যের মূল্য নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন;(গ) কৃষি বিপণন ও কৃষি ব্যবসা উন্নয়নের ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ;(ঘ) কৃষক ও কৃষিপণ্যের বাজার সংযোগ সৃষ্টি ও সুষ্ঠু সরবরাহের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান;(ঙ) কৃষিপণ্য উৎপাদন এবং বিপণন ও ব্যবসা সম্পর্কিত অর্থনৈতিক গবেষণা পরিচালনা;(চ) কৃষিপণ্য উৎপাদন ও ব্যবসায় নিয়োজিত কৃষক, কৃষি ব্যবসায়ী, প্রক্রিয়াজাতকারী, রপ্তানিকারক ও ব্যবসায়ী সমিতিসমূহের সহিত নিবিড় সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে কৃষিপণ্যের আধুনিক বিপণন ব্যবস্থা সম্প্রসারণ;(ছ) সুষ্ঠু বিপণনের স্বার্থে কৃষিপণ্য উৎপাদন এলাকায় বাজার অবকাঠামো, গুদাম, হিমাগার, কুলচেম্বার, ইত্যাদি নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা জোরদারকরণ;(জ) কৃষিপণ্য ও কৃষি উপকরণের মজুদ বা গুদামজাতকরণ, পণ্যের গুণগতমান, মেয়াদ, মোড়কীকরণ ও সঠিক ওজনে ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিবীক্ষণ;(ঝ) কৃষিপণ্যের সর্বনিম্ন মূল্য ও যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন;(ঞ) কৃষিপণ্যের মূল্য সংযোজন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কার্যক্রমে সহায়তা প্রদান;(ট) কৃষিপণ্যের মূল্য সহায়তা প্রদান;(ঠ) কৃষিপণ্যের অভ্যন্তরীণ ও রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ;(ড) কৃষিভিত্তিক শিল্প ও ব্যবসার উন্নয়ন, উৎসাহ প্রদান, প্রসার এবং চুক্তিভিত্তিক বিপণন ব্যবস্থার কার্যপদ্ধতি উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ;(ঢ) বাজারকারবারি অথবা কৃষি ব্যবসায়ী সংগঠন, সমিতি, সংস্থা, কৃষিভিত্তিক সংগঠন ও সমবায় সমিতিসমূহকে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে, তালিকাভুক্তকরণ এবং, প্রয়োজনে, জাতীয় এবং জেলা পর্যায়ে কৃষিভিত্তিক সংগঠনসমূহের ফেডারেশন অথবা কনসোর্টিয়াম গঠন;(ণ) বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে সুপার শপে সংরক্ষিত কৃষিপণ্যের গুণগতমান, নির্ধারিত মূল্য ও বিপণন কার্যক্রম পরিদর্শন, পরিবীক্ষণ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে পরামর্শ প্রদান;(ত) কৃষিপণ্য ও কৃষি উপকরণের বিপণন কার্যক্রম সংক্রান্ত মান সংরক্ষণ, পরিদর্শন ও পরিবীক্ষণ; এবং(থ) সরকার কর্তৃক অর্পিত অন্যান্য দায়িত্ব পালন।
৫। (১) সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত তারিখ হইতে, কৃষিপণ্য ও কৃষি উপকরণ ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য যে কোনো বাজারকে প্রজ্ঞাপিত বাজার হিসাবে ঘোষণা করিতে পারিবে।(২) কোনো ব্যক্তি লাইসেন্স গ্রহণ ব্যতিত প্রজ্ঞাপিত বাজারে বাজারকারবারি হিসাবে কার্য পরিচালনা করিতে পারিবেন না।(৩) উপ-ধারা (২) এর অধীন লাইসেন্সের জন্য বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতি, ফরম ও ফি প্রদান সাপেক্ষে, মহাপরিচালকের নিকট আবেদন করিতে হইবে।(৪) উপ-ধারা (৩) এর অধীন আবেদন প্রাপ্তির পর, মহাপরিচালক বা তদকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারী, বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতি ও শর্তে, কোনো নির্দিষ্ট প্রজ্ঞাপিত বাজারে বাজারকারবারি হিসাবে কার্য পরিচালনার জন্য লাইসেন্স প্রদান করিতে পারিবেন।(৫) প্রজ্ঞাপিত বাজার বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হইবে।
৬। (১) কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীন লাইসেন্স গ্রহণ ব্যতিত ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে গুদাম বা হিমাগার পরিচালনা করিতে পারিবেন না।(২) কোনো ব্যক্তি গুদাম বা হিমাগার পরিচালনা করিতে চাহিলে বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতি, ফরম ও ফি প্রদান সাপেক্ষে, মহাপরিচালকের নিকট লাইসেন্সের জন্য আবেদন করিতে হইবে।(৩) উপ-ধারা (২) এর অধীন আবেদন প্রাপ্তির পর, মহাপরিচালক বা তদকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারী, যাচাই-বাছাইক্রমে সন্তুষ্ট হইলে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতি ও শর্তে, গুদাম বা হিমাগার পরিচালনার জন্য লাইসেন্স প্রদান করিতে পারিবেন।
রপ্তানিকারক, আমদানিকারক, ইত্যাদি কর্তৃক লাইসেন্স গ্রহণ
৭। (১) কৃষিপণ্য ও কৃষি উপকরণের রপ্তানিকারক, আমদানিকারক, ডিলার, মিলার, সরবরাহকারী, প্রক্রিয়াজাতকারী এবং চুক্তিবদ্ধ চাষ ব্যবস্থার সহিত সম্পৃক্ত ব্যক্তিকে কার্য পরিচালনার জন্য লাইসেন্স গ্রহণ করিতে হইবে।(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন লাইসেন্সের জন্য বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতি, ফরম ও ফি প্রদান সাপেক্ষে, মহাপরিচালকের নিকট আবেদন করিতে হইবে।(৩) উপ-ধারা (২) এর অধীন আবেদন প্রাপ্তির পর, মহাপরিচালক বা তদকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারী, বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতি ও শর্তে, লাইসেন্স প্রদান করিতে পারিবেন।ব্যাখ্যা।- এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে ‘‘মিলার’’ ও ‘‘প্রক্রিয়াজাতকারী’’ বলিতে এইরূপ ব্যক্তিকে বুঝাইবে যাহার অধীন অন্যূন ১০(দশ) জন শ্রমিক নিয়োজিত রহিয়াছে।
১০। কোনো ব্যক্তি লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করিলে, মহাপরিচালক বা তদকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারী, বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল করিতে পারিবেন।
১২। জরুরি অবস্থা বা সংকট মোকাবিলার জন্য সরকারের চাহিদা ও নির্দেশনা অনুযায়ী গুদাম বা হিমাগার মালিক এবং মজুতকারি গুদাম অথবা হিমাগারে মজুতকৃত পণ্য সরবরাহ করিতে বাধ্য থাকিবেন।
১৩। (১) মহাপরিচালক বা তদকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারী, কোনো গুদাম বা হিমাগারের লাইসেন্স, যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম, মজুতকৃত কৃষিপণ্য, হিসাব বহি ও নথিপত্র পরিদর্শন ও পরীক্ষা করিতে পারিবেন।(২) জেলা বা উপজেলা কৃষি বিপণন সমন্বয় কমিটির কোনো সদস্য বা মহাপরিচালক বা তদকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মচারী বাজার, প্রজ্ঞাপিত বাজার, গুদাম বা হিমাগার পরিদর্শন করিতে পারিবে এবং পরিদর্শনকালে প্রত্যেক বাজারকারবারি, কৃষি ব্যবসায়ী, গুদাম বা হিমাগার মালিক লাইসেন্স প্রদর্শন করিতে বাধ্য থাকিবেন।
১৪। এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার, ‘জাতীয় কৃষি বিপণন সমন্বয় কমিটি’, ‘জেলা কৃষি বিপণন সমন্বয় কমিটি’, ‘উপজেলা কৃষি বিপণন সমন্বয় কমিটি’ এবং ‘বাজারভিত্তিক ব্যবস্থাপনা কমিটি’ গঠন করিতে পারিবে।(২) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত কমিটির গঠন এবং কার্যাবলি বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে।
১৫। (১) জরুরি অবস্থা বা সংকট মোকাবিলার জন্য সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত সময়ের জন্য, এক বা একাধিক কৃষিপণ্য সমগ্র দেশ বা নির্দিষ্ট এলাকার জন্য প্রজ্ঞাপিত শস্য হিসাবে ঘোষণা করিতে পারিবে।(২) সরকার, প্রয়োজনে, উপ-ধারা (১) এর অধীন প্রজ্ঞাপিত শস্যসমূহের এলাকাভিত্তিক এবং নির্দিষ্টকৃত সময়ের জন্য মূল্য নির্ধারণ করিতে পারিবে।
১৬। সরকার, মহাপরিচালকের সহিত পরামর্শক্রমে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা,-(ক) প্রজ্ঞাপিত বাজারের জন্য মার্কেট চার্জ নির্ধারণ করিতে পারিবে;(খ) কৃষিপণ্য ও কৃষি উপকরণ মজুত অথবা গুদামজাতকরণের জন্য গুদাম অথবা হিমাগার মালিক কর্তৃক মজুতকারির নিকট হইতে আদায়যোগ্য ভাড়ার হার নির্ধারণ করিতে পারিবে।
১৭। মহাপরিচালক বা তদকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারী, জেলা অথবা উপজেলা কৃষি বিপণন সমন্বয় কমিটির কোনো সদস্য কোনো বাজারকারবারি, কৃষি ব্যবসায়ী, গুদাম বা হিমাগার মালিক, সুপার শপ ও কৃষিভিত্তিক শিল্প উদ্যোক্তার নিকট বাজার তথ্যসহ অন্যান্য তথ্য চাহিতে পারিবেন এবং তাহারা উহা সরবরাহ করিতে বাধ্য থাকিবেন।
১৮। মহাপরিচালক, প্রয়োজনে, এই আইনের অধীন কোনো ক্ষমতা প্রয়োগ বা কার্য সম্পাদনের উদ্দেশ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা অন্য কোনো সরকারি বা সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষের সহায়তা গ্রহণ করিতে পারিবেন।
১৯। (১) কোনো ব্যক্তি-(ক) ধারা ৫, ৬ ও ৭ এর অধীন লাইসেন্স গ্রহণ ব্যতিত কার্য পরিচালনা করিলে;(খ) লাইসেন্স হস্তান্তর করিলে;(গ) ধারা ১৬ এ নির্ধারিত মার্কেট চার্জ বা ভাড়ার অতিরিক্ত আদায় করিলে;(ঘ) কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বা উহার কোনো কর্মচারীকে এই আইনের অধীন কার্য সম্পাদনে বাধা প্রদান করিলে বা চাহিত তথ্য প্রদান না করিলে;(ঙ) তাহার মালিকানাধীন কৃষি উপকরণ ও কৃষিপণ্যের পাইকারি ও খুচরা বিক্রয় মূল্য প্রকাশ্য স্থানে বা পণ্যের মোড়কে বা দৃষ্টিগোচর হয় এমনভাবে প্রদর্শন না করিলে;(চ) কৃষিপণ্যের মোড়কে পণ্যের পুষ্টিমান ও উপাদানের শতকরা হার, উৎপাদন ও মেয়াদ-উত্তীর্ণের তারিখ এবং সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য উল্লেখ না করিলে বা মেয়াদণ্ডউত্তীর্ণের পর উহা বিক্রয় করিলে বা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে সংরক্ষণ করিলে;(ছ) জনস্বাস্থ্যোর জন্য ক্ষতিকর কোনো রাসায়নিক বা অন্য কোনো দ্রব্য কৃষিপণ্যে ব্যবহার করিলে;(জ) কৃষিপণ্য ও কৃষি উপকরণ বিক্রয়কালে ওজনে কম প্রদান করিলে;(ঝ) ধারা ১২ এর বিধান লঙ্ঘন করিলে;(ঞ) ক্রয়কৃত পণ্যের মূল রশিদ দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণ না করিলে;(ট) সরকার কর্তৃক ইজারাকৃত বা অনুমোদিত হাট বাজারে কৃষিপণ্য পাইকারি বা খুচরা হিসাবে ক্রয় বিক্রয়ে বাধা প্রদান করিলে;(ঠ) কৃষি উপকরণ ও কৃষিপণ্যের সরবরাহে বাধা সৃষ্টি অথবা যে কোনোভাবে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করিলে বা বাজারে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও তাহার গুদাম বা হিমাগার হইতে খুচরা বিক্রেতা বা ভোক্তার নিকট বিক্রয় করিতে অস্বীকার করিলে;(ড) কৃষিপণ্য, কৃষি উপকরণ ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করিলে বা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হারের অধিক মুনাফা গ্রহণ করিলে;উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ১ (এক) বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।(২) কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীন কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত হইবার পর পুনরায় একই অপরাধ সংঘটন করিলে তিনি উক্ত অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডের দ্বিগুণ দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
২০। কোনো প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটিত হইলে, উক্ত অপরাধের সহিত প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা রহিয়াছে প্রতিষ্ঠানের এমন প্রত্যেক পরিচালক, অংশীদার, প্রধান নির্বাহী, ম্যানেজার, সচিব বা অন্য কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা প্রতিনিধি উক্ত অপরাধ সংঘটন করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে, যদি না তিনি প্রমাণ করিতে পারেন যে, উক্ত অপরাধ তাহার অজ্ঞাতসারে সংঘটিত হইয়াছে অথবা উক্ত অপরাধ রোধ করিবার জন্য তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়াছেন।ব্যাখ্যা।-এই ধারায়-(ক) ‘‘প্রতিষ্ঠান’’ বলিতে কোনো কোম্পানি, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, অংশীদারি কারবার, সমিতি বা একাধিক ব্যক্তি সমন্বয়ে গঠিত সংগঠনকে বুঝাইবে; এবং(খ) বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ‘‘পরিচালক’’ বলিতে উহার কোনো অংশীদার বা পরিচালনা বোর্ডের সদস্যকেও বুঝাইবে।
২৫। ফৌজদারি কার্যবিধিতে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো প্রথম শ্রেণির জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এই আইনের অধীন দণ্ড আরোপ করিতে পারিবে।
২৭। (১) মহাপরিচালক বা তদকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারী বাজারকারবারি, কৃষি ব্যবসায়ী, কৃষক, ক্রেতা ও বিক্রেতা, গুদাম ও হিমাগার মালিক, মজুদকারী, পণ্য পরিমাপক, চুক্তিবদ্ধ চাষব্যবস্থার পক্ষগণ বা অন্য কোনো পক্ষের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আবেদনের প্রেক্ষিতে মীমাংসা করিতে পারিবেন।(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন বিরোধ মীমাংসার ক্ষেত্রে মহাপরিচালক বা তদকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারী কর্তৃক প্রদত্ত সিদ্ধান্ত দ্বারা কোনো পক্ষ সংক্ষুব্ধ হইলে তিনি, উক্ত সিদ্ধান্ত প্রদানের ৭ (সাত) দিনের মধ্যে-(ক) মহাপরিচালক কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারীর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মহাপরিচালকের নিকট; এবং(খ) মহাপরিচালকের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরকারের নিকট আপিল করিতে পারিবেন এবং আপিল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলিয়া গণ্য হইবে।
২৯। এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, মহাপরিচালক, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইন বা বিধির সহিত অসামঞ্জস্যপূর্ণ নহে এইরূপ প্রবিধান প্রণয়ন করিতে পারিবে।
৩১। (১) Agricultural Produce Markets Regulation Act, 1964 (East Pakistan Act No. IX of 1964) এবং Warehouses Ordinance, 1959 (East Pakistan Ordinance No. LXVI of 1959), অতঃপর যথাক্রমে উক্ত Act ও Ordinance বলিয়া উল্লিখিত, এতদ্দ্বারা রহিত করা হইল।(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন রহিতকরণ সত্ত্বেও, উক্ত Act ও Ordinance এর অধীন-(ক) কৃত কোনো কাজ বা গৃহীত কোনো ব্যবস্থা বা প্রদত্ত লাইসেন্স বা চলমান কোনো কার্য এই আইনের অধীন কৃত, গৃহীত, প্রদত্ত বা চলমান বলিয়া গণ্য হইবে;(খ) প্রণীত কোনো বিধিমালা, এই আইনের বিধানাবলির সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে, এই আইনের অধীন প্রণীত বলিয়া গণ্য হইবে; এবং(গ) দায়েরকৃত কোনো মামলা অনিষ্পন্ন থাকিলে উহা এমনভাবে নিষ্পন্ন করিতে হইবে যেন উক্ত Act ও Ordinance রহিত হয় নাই।
৩২। (১) এই আইন কার্যকর হইবার পর সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইনের মূল বাংলা পাঠের ইংরেজিতে অনূদিত একটি নির্ভরযোগ্য পাঠ (Authentic English Text) প্রকাশ করিবে।(২) বাংলা পাঠ ও ইংরেজি পাঠের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে বাংলা পাঠ প্রাধান্য পাইবে।