যেহেতু মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির স্বাস্থ্য সেবা প্রদান, মর্যাদার সুরক্ষা, সম্পত্তির অধিকার ও পুনর্বাসন এবং সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করিবার জন্য The Lunacy Act, 1912 (Act No. IV of 1912) রহিতক্রমে উহা যুগোপযোগী করিয়া নূতনভাবে একটি আইন প্রণয়ন সমীচীন ও প্রয়োজনীয়;সেহেতু এতদ্দ্বরা নিম্নরূপ আইন করা হইল, যথা :-
২। বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থি কোনো কিছু না থাকিলে, এই আইনে-(১) ‘অপ্রতিবাদী রোগী (Nonprotesting patient)’ অর্থ মানসিক স্বাস্থ্যগত কারণে চিকিৎসা অথবা ভর্তিসংক্রান্ত মতামত প্রদানে অক্ষম কিন্তু মানসিক চিকিৎসা গ্রহণে বাধা প্রদান করেন নাই এইরূপ কোনো মানসিক রোগী অথবা মানসিক প্রতিবন্ধী;(২) ‘অভিভাবক’ অর্থ ধারা ২১ এ উল্লিখিত কোনো অভিভাবক;(৩) ‘আত্মীয়’ অর্থ অভিভাবকের অপারগতায় অথবা অনুপস্থিতিতে মানসিকভাবে অসুস্থ রোগীর তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত রক্তসম্পর্কিয় অথবা বৈবাহিক সূত্রে অথবা আদালত অনুমোদিত কোনো আত্মীয়-স্বজন;(৪) ‘আদালত’ অর্থ জেলা জজ আদালত বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোনো আদালত;(৫) ‘কোম্পানী’ অর্থ কোম্পানী আইন, ১৯৯৪ (১৯৯৪ সনের ১৮ নং আইন) এ বর্ণিত কোম্পানী;(৬) ‘চিকিৎসা’ অর্থ মানসিক রোগবিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে ঔষধ প্রয়োগ, পরামর্শ বা সেবা প্রদান অথবা সরকার অনুমোদিত বিজ্ঞানসম্মত বিকল্প চিকিৎসা;(৭) ‘চিকিৎসার সম্মতি (Consent for treatment)’ অর্থ চিকিৎসার পূর্বে রোগ নির্ণয়, চিকিৎসার উপকারিতা, ঝুঁকি, চিকিৎসা গ্রহণ না করিবার ক্ষতি, ইত্যাদি বিষয় অবহিত রাখিয়া চিকিৎসা প্রদানের বা উক্ত চিকিৎসার পরিবর্তে সরকার অনুমোদিত বিজ্ঞানসম্মত বিকল্প চিকিৎসা সম্পর্কে ভীতি অথবা প্ররোচনা ব্যতিরেকে উহা গ্রহণের জন্য রোগী বা তাহার অভিভাবকের নিকট হইতে অনুমতি গ্রহণ;(৮) ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসার’ অর্থ মানসিক হাসপাতালে নিযুক্ত মানসিক চিকিৎসায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কোনো মেডিক্যাল অফিসার বা মানসিক রোগবিশেষজ্ঞ;(৯) ‘নাবালক (Minor)’ অর্থ আঠারো বৎসর বয়সের নিম্নে কোনো ব্যক্তি;(১০) ‘প্রজাতন্ত্রের সরকারি হিসাব’ অর্থ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৮৪ (২) এ বর্ণিত হিসাব;(১১) ‘ব্যবস্থাপক’ অর্থ মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আদালত কর্তৃক নিযুক্ত ব্যক্তি;(১২) ‘বিধি’ অর্থ আইনের অধীন প্রণীত বিধি;(১৩) ‘ম্যাজিস্ট্রেট’ অর্থ মেট্রোপলিটন এলাকার ক্ষেত্রে এখতিয়ার সম্পন্ন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, এবং মেট্রোপলিটন এলাকা ব্যতীত অন্য এলাকার ক্ষেত্রে এখতিয়ার সম্পন্ন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট;(১৪) ‘মাদকাসক্তি’ অর্থ কোনো দ্রব্য নিয়মিত ব্যবহার বা গ্রহণ বা নিয়মিত গ্রহণ পরবর্তী অকস্মাৎ বন্ধের ফলে ব্যক্তির জন্য ক্ষতিকর শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তনের লক্ষণ;(১৫) ‘মানসিক অসুস্থতা (Mental illness)’ অর্থ দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসার কর্তৃক নির্ণীত মাদকাসক্তি এবং মানসিক প্রতিবন্ধিতা ব্যতীত মানসিক রোগের একটি ধরন;(১৬) ‘মানসিক রোগ (Mental disorder)’ অর্থ মানসিক প্রতিবন্ধিতা এবং মাদকাসক্তিসহ ক্লিনিক্যালি স্বীকৃত এইরূপ কতিপয় লক্ষণ অথবা আচরণ যাহা বিভিন্ন প্রকার শারীরিক ও মানসিক অথবা উভয়ের সহিত সম্পর্কিত এবং যাহা ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবন-যাপনকে বাধাগ্রস্ত করে;(১৭) ‘মানসিক রোগবিশেষজ্ঞ (Psychiatrist)’ অর্থ সরকার কর্তৃক স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান হইতে মানসিক রোগ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিপ্রাপ্ত এবং বিএমডিসি কর্তৃক নিবন্ধনকৃত চিকিৎসক;(১৮) ‘মানসিক সুস্থতা’ অর্থ এমন এক স্বাভাবিক অবস্থা যখন প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের সম্ভাবনাসমূহ অনুধাবন করিতে পারেন, জীবনের স্বাভাবিক চাপসমূহের সহিত সংগতি রাখিয়া জীবন যাপন করিতে পারেন, উৎপাদনমুখী ও ফলদায়ক কার্যে নিজেকে নিয়োজিত রাখিতে পারেন এবং নিজ এলাকার জনগোষ্ঠীর জন্য কোনোভাবে অবদান রাখিতে সক্ষম হন;(১৯) ‘মানসিক স্বাস্থ্য রিভিউ ও মনিটরিং কমিটি’ অর্থ আইনের ধারা ৫ অনুযায়ী গঠিত রিভিউ ও মনিটরিং কমিটি;(২০) ‘মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত পেশাজীবী বা সাইকোলজিস্ট’ অর্থ স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হইতে ডিগ্রিপ্রাপ্ত ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, এডুকেশনাল সাইকোলজিস্ট, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মনোবিজ্ঞানী, সাইকিয়াট্রি, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি, সাইকিয়াট্রিক সোশ্যাল ওয়ার্ক, অকুপেশনাল থেরাপি, এডুকেশনাল সাইকোলজি, কাউন্সেলিং, কাউন্সেলিং সাইকোলজি, সাইকোথেরাপি এবং সাইকিয়াট্রিক নার্সিং-এ নিয়োজিত স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠান হইতে ডিগ্রি ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি;(২১) ‘মানসিক হাসপাতাল’ অর্থ ধারা ৭ এর অধীন স্থাপিত বা ধারা ৮ অনুযায়ী লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোনো মানসিক হাসপাতাল, মানসিক রোগ চিকিৎসা কেন্দ্র, মানসিক ক্লিনিক, মাদকাসক্তদের চিকিৎসা কেন্দ্র, পুনর্বাসন কেন্দ্র বা আশ্রয় কেন্দ্র, উহা যে নামেই অভিহিত হউক;(২২) ‘মেডিক্যাল সার্টিফিকেট (Medical certificate)’ অর্থ দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসার কর্তৃক রোগী পরীক্ষান্তে প্রদত্ত সনদপত্র; এবং(২৩) ‘লাইসেন্স (Licence)’ অর্থ আইনের ধারা ৮ অনুযায়ী প্রদত্ত লাইসেন্স।
৫। (১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে প্রত্যেক জেলায় ‘মানসিক স্বাস্থ্য রিভিউ ও মনিটরিং কমিটি’ নামে একটি কমিটি থাকিবে এবং উহা নিম্নবর্ণিত সদস্য সমন্বয়ে গঠিত হইবে, যাহাদের মধ্যে ন্যূনতম একজন নারী সদস্য থাকিবেন, যথা :-(ক) জেলা প্রশাসক সভাপতি;(খ) উপ-পরিচালক, জেলা সমাজসেবা কার্যালয় সদস্য;(গ) জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সদস্য;(ঘ) জেলা প্রশাসক কর্তৃক মনোনীত একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ বা সাইকোলজিস্ট সদস্য; এবং(ঙ) সিভিল সার্জন সদস্য-সচিব।(২) মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির অভিভাবক বা আত্মীয় রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে সংক্ষুব্ধ হইলে কমিটির নিকট প্রতিকারের জন্য আবেদন করিতে পারিবে।(৩) উপ-ধারা (২) অনুযায়ী আবেদন প্রাপ্তির পর কমিটি ৩০ (ত্রিশ) দিবসের মধ্যে উহা নিষ্পত্তি করিবে।(৪) মানসিক স্বাস্থ্য রিভিউ ও মনিটরিং কমিটির আদেশের বিরূদ্ধে সংক্ষুব্ধ হইলে সরকারের নিকট আপিল দায়ের করা যাইবে।(৫) মানসিক স্বাস্থ্য রিভিউ ও মনিটরিং কমিটি সংক্রান্ত সকল বিষয় বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে।
৬। (১) মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির স্বাস্থ্য, সম্পত্তি, মর্যাদা, শিক্ষা ও অন্যন্য অধিকারের বিষয়াবলি নিশ্চিত করিতে হইবে।(২) উপ-ধারা (১)-এ বর্ণিত মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির অধিকার সংক্রান্ত বিষয়াবলি বিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হইবে।
৭। (১) সরকার, মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে যে কোনো স্থানে মানসিক হাসপাতাল স্থাপন, বা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বা জেলা হাসপাতালসমূহের পৃথক বিভাগ বা ইউনিট প্রতিষ্ঠা করিতে পারিবে :তবে শর্ত থাকে যে, প্রতিটি মানসিক হাসপাতাল বা ইউনিটে মাদকাসক্ত ব্যক্তি এবং বিচারাধীন বা সাজাপ্রাপ্ত মানসিক রোগীর চিকিৎসার জন্য পৃথক ব্যবস্থা থাকিতে হইবে :আরও শর্ত থাকে যে, প্রতিটি মানসিক হাসপাতাল বা ইউনিটে নাবালক মানসিক রোগীর চিকিৎসার জন্য পৃথক ব্যবস্থা থাকিতে হইবে।(২) মানসিক হাসপাতালের মান নির্ধারণ ও তত্ত্বাবধান সংক্রান্ত বিষয়াবলি বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে।
৮। (১) উপ-ধারা (২) এর বিধান সাপেক্ষে, সরকারের নিকট হইতে লাইসেন্স গ্রহণ করিয়া বেসরকারি মানসিক হাসপাতাল স্থাপন ও পরিচালনা করা যাইবে।(২) বেসরকারি মানসিক হাসপাতাল স্থাপনের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন, স্থগিতকরণ, বাতিল, ফি নির্ধারণ, উহার শ্রেণি ও মান এবং এতদসংক্রান্ত অন্যান্য বিষয় বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে।
৯। (১) সরকার কোনো মানসিক হাসপাতালে যে কোনো সময়ে প্রবেশ, পরিদর্শন, রেজিস্টার ও চিকিৎসা সেবা সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি, নমুনা, কাগজপত্র পরীক্ষা এবং জব্দ করিতে পারিবে :তবে শর্ত থাকে যে, রেজিস্টার বা কাগজপত্র কোনো রোগীর রোগ সংক্রান্ত হইলে সংশ্লিষ্ট রোগী বা তাহার অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত উহা সংগ্রহ করা বা জনসমক্ষে প্রকাশ করা যাইবে না।(২) উপ-ধারা (১) এ বর্ণিত পরিদর্শনে এই আইন ও তদধীন প্রণীত বিধি লঙিঘত হইয়াছে মর্মে প্রতীয়মান হইলে, সরকার-(ক) নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণের বা প্রতিপালনের জন্য আদেশ প্রদান করিতে পারিবে এবং উক্ত মানসিক হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি বা দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসার উহা পালনে বাধ্য থাকিবেন;(খ) বেসরকারি মানসিক হাসপাতালে প্রদত্ত সেবা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক বা মানসম্মত না হইলে এবং এই আইন, বিধি অথবা তদধীন প্রদত্ত নির্দেশ বা লাইসেন্সের শর্তাবলী ভঙ্গের প্রকৃতি যদি এইরূপ হয় যে, উক্ত বেসরকারি মানসিক হাসপাতালকে কারণ দর্শানোর সুযোগ প্রদান করা সমীচীন নহে, তাহা হইলে জনস্বার্থে উক্ত প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিতপূর্বক তাৎক্ষণিকভাবে উহা বন্ধ করিতে পারিবে; এবং(গ) কোনো বেসরকারি মানসিক হাসপাতাল বন্ধ করা হইলে চিকিৎসাধীন রোগীকে অনতিবিলম্বে উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা সম্বলিত অন্য কোনো হাসপাতালে নিজ দায়িত্বে স্থানান্তরের জন্য বেসরকারি হাসপাতাল পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবে।(৩) উপ-ধারা (১) এবং (২)-এর অধীন পরিদর্শন, তল্লশি ও জব্দ সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয় বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে।
১০। (১) কোনো ব্যক্তি এই আইন ও তদধীন প্রণীত বিধির কোনো বিধান লঙঘন করিয়া লাইসেন্সবিহীনভাবে মানসিক হাসপাতাল পরিচালনা করিলে সরকার তাহাকে শুনানির যুক্তিসংগত সুযোগ প্রদান করিয়া, অনধিক ৫(পাঁচ) লক্ষ টাকা, এবং একই ব্যত্যয়ের পুনরাবৃত্তিতে অনধিক ২০ (বিশ) লক্ষ টাকা জরিমানা আরোপ করিতে পারিবে।(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন জরিমানা আরোপের অতিরিক্ত হিসাবে সরকার সংশ্লিষ্ট মানসিক হাসপাতালের সকল কার্যক্রম অনতিবিলম্বে বন্ধ করিবার নির্দেশ প্রদান এবং মালামাল জব্দ করিতে পারিবে।(৩) মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত পেশাজীবী জ্ঞাতসারে কোনো লাইসেন্সবিহীন মানসিক হাসপাতালে মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত থাকিলে সরকার তাহাকে অনধিক ১(এক) লক্ষ টাকা জরিমানা করিতে পারিবে।(৪) এই ধারার অধীন আরোপিত জরিমানা সরকারি কোষাগারে জমা করিতে হইবে।(৫) এই ধারার অধীন সরকার কর্তৃক জরিমানা আরোপ ও আপিল করার পদ্ধতি বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে।
১১। (১) মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রে স্বেচ্ছায় ভর্তি, অপ্রতিবাদী রোগী ভর্তি এবং অনিচ্ছাকৃত রোগী ভর্তির বিধান প্রযোজ্য হইবে।তবে শর্ত থাকে যে, নাবালক রোগী ভর্তির ক্ষেত্রে অভিভাবক বা আত্মীয়ের নিকট হইতে চিকিৎসার সম্মতি গ্রহণ করিতে হইবে।(২) ভর্তির লক্ষ্যে আগত রোগীকে ধারা ১২ এবং ১৩-এ বর্ণিত সময়সীমা বা আদালত কর্তৃক নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে পরীক্ষার পর দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসার বা মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ বিধিতে উল্লিখিত নির্ধারিত ফরম পূরণপূর্বক মেডিক্যাল সার্টিফিকেট প্রদান করিতে পারিবে।(৩) উপ-ধারা (১) এর অধীন রোগী ভর্তি সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয় বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে।
১২। (১) পূর্ণবয়ষ্ক রোগীর ক্ষেত্রে তৎসম্মতিতে ভর্তি করা যাইবে।(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন আবেদন প্রাপ্তির ২৪ (চবিবশ) ঘণ্টার মধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসার ভর্তিচ্ছু ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়া বিধিতে উল্লিখিত নির্ধারিত ফরম পূরণপূর্বক সিদ্ধান্ত প্রদান করিবে।(৩) স্বেচ্ছায় ভর্তিকৃত রোগী ছাড়পত্র গ্রহণের অথবা চিকিৎসা প্রত্যাখ্যান করিবার ইচ্ছা প্রকাশ করিতে পারিবে।তবে শর্ত থাকে যে, ভর্তিকৃত ব্যক্তি দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসার কর্তৃক অনিচ্ছাকৃত ভর্তির আওতাভুক্ত ঘোষিত হইলে উক্ত আবেদন বিবেচ্য হইবে না।(৪) স্বেচ্ছায় ভর্তিকৃত রোগীকে দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসার তাহার ভর্তির মর্যাদা (admission status) পরিবর্তন অথবা স্বেচ্ছায় ছাড়পত্র গ্রহণ অথবা চিকিৎসা প্রত্যাখ্যান করিবার অধিকার ক্ষুন্ন হইতে পারে মর্মে অবহিত করিবে।(৫) মানসিক স্বাস্থ্য রিভিউ ও মনিটরিং কমিটি রোগী ভর্তির ও মেয়াদের যৌক্তিকতা প্রতি পনের দিবস এবং নাবালকের ক্ষেত্রে প্রতি সাত দিবস অন্তরর অন্তর পুনর্বিবেচনা করিবে।
১৩। (১) অভিভাবক অথবা আত্মীয়ের আবেদন বা চিকিৎসার সম্মতিক্রমে অপ্রতিবাদী রোগী ভর্তি করা যাইবে।(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন আবেদন বা সম্মতি প্রাপ্তির ২৪ (চবিবশ) ঘণ্টার মধ্যে রোগীর মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়া দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসার বিধিতে উল্লিখিত নির্ধারিত ফরম পূরণপূর্বক সিদ্ধান্ত প্রদান করিবে।(৩) অপ্রতিবাদী রোগী ভর্তির ও মেয়াদের যৌক্তিকতা মানসিক স্বাস্থ্য রিভিউ ও মনিটরিং কমিটি ২৮ (আটাশ) দিবস অন্তর অন্তর পুনর্বিবেচনা করিবে।(৪) অপ্রতিবাদী রোগী বা অভিভাবককে দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসার তাহার ভর্তির মর্যাদা (Admission Status) পরিবর্তন অথবা স্বেচ্ছায় ছাড়পত্র গ্রহণ অথবা চিকিৎসা প্রত্যাখ্যান করিবার অধিকার ক্ষুণ্ণ হইতে পারে মর্মে অবহিত করিবে।
১৪। (১) উপ-ধারা (৪) এর বিধান সাপেক্ষে মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির অভিভাবক বা আত্মীয় বা স্থানীয় অধিক্ষেত্রে কর্মরত পুলিশ অফিসার বা দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসারের আবেদন বা চিকিৎসার সম্মতির পরিপ্রেক্ষিতে বিধিতে উল্লিখিত নির্ধারিত ফরম পূরণপূর্বক অনিচ্ছুক রোগীর ভর্তির কার্যক্রম গ্রহণ করা যাইবে।(২) উপ-ধারা (১) এ বর্ণিত ভর্তির মেয়াদ হইবে নিম্নরূপ, যথা:-(ক) দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসারের সুপারিশের ভিত্তিতে ৭২ (বাহাত্তর) ঘণ্টা পর্যন্ত জরুরি ভর্তি ;(খ) একজন মানসিক রোগবিশেষজ্ঞের সুপারিশ অনুসারে ২৮ (আটাশ) দিবস পর্যন্ত চিকিৎসা অথবা অ্যাসেসমেন্টের (Assessment) জন্য ভর্তি ;(গ) মানসিক স্বাস্থ্য রিভিউ ও মনিটরিং কমিটি অথবা মানসিক রোগবিশেষজ্ঞের পুনর্বিবেচনা অনুসারে ৬০ (ষাট) দিবস পর্যন্ত চিকিৎসা অথবা অ্যাসেসমেন্টের (Assessment) জন্য ভর্তি ;(ঘ) মানসিক স্বাস্থ্য রিভিউ ও মনিটরিং কমিটির পুনর্বিবেচনা অনুসারে দ্বিতীয়বার ১২০ (একশত বিশ) দিবস পর্যন্ত এবং প্রয়োজনে পরবর্তীকালে প্রতি ১৮০ (একশত আশি) দিবস পর্যন্ত চিকিৎসার জন্য ভর্তি; এবং(ঙ) দফা (ঘ) এ নির্ধারিত সময়সীমা উত্তীর্ণ হইবার পর মানসিক স্বাস্থ্য রিভিউ ও মনিটরিং কমিটি রোগীর চিকিৎসার গুরুত্ব বিবেচনাক্রমে ভর্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করিতে পারিবে।(৩) অনিচ্ছুক রোগীর অভিভাবক বা আত্মীয়কে দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসার তাহার ভর্তির মর্যাদা (Admission Status) পরিবর্তন অথবা স্বেচ্ছায় ছাড়পত্র গ্রহণ অথবা চিকিৎসা প্রত্যাখ্যান করিবার অধিকার ক্ষুণ্ণ হইতে পারে মর্মে অবহিত করিবে।(৪) তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘায়িত চিকিৎসার জন্য অনিচ্ছুক রোগীর ভর্তির পূর্বে দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসার বা মানসিক রোগবিশেষজ্ঞ বা মানসিক স্বাস্থ্য রিভিউ ও মনিটরিং কমিটি রোগীর অসুস্থতার প্রকৃতি ও মাত্রা, আক্রমণের ঘটনা ও প্রবণতা, ঔষধ গ্রহণে অনিচ্ছা, আত্মহত্যার প্রবণতা, রাসত্মায় ভবঘুরে থাকিবার প্রবণতা এবং রোগী ভর্তি না করা হইলে তাহার স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা এবং জনগণের নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হইবার আশঙ্কা বিবেচনা করিবে।ব্যাখ্যা।- এই ধারায় ‘‘অনিচ্ছুক রোগীর’’ বলিতে এমন মানসিক রোগীকে বুঝাইবে, যাহার মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ, মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের বিবেচনায় জরম্নরি হওয়া সত্ত্বেও উক্ত রোগী চিকিৎসা গ্রহণে অনাগ্রহী।
ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত মানসিক রোগী ভর্তি প্রক্রিয়া
১৫। (১) ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত মানসিক রোগী রিসেপশন অর্ডারের ভিত্তিতে ভর্তি থাকিবে।(২) উপ-ধারা (১)-এর অধীন রিসেপশন অর্ডার গ্রহণ ও অন্যান্য বিষয় বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে।ব্যাখ্যা: এ ধারায় ‘রিসেপশন অর্ডার (Reception order)’ বলিতে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত বা দন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি এবং আবদ্ধ করিয়া রাখিবার উদ্দেশ্যে ম্যাজিস্ট্রেট প্রদত্ত আদেশকে বুঝাইবে।
১৬। (১) স্বেচ্ছায়, অপ্রতিবাদী এবং অনিচ্ছুক ভর্তি মানসিক রোগীকে সুস্থ হইবার পর দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসারের অনুমতিক্রমে ছাড়পত্র প্রদান করা যাইবে।(২) স্বেচ্ছায়, অপ্রতিবাদী এবং অনিচ্ছুক ভর্তি রোগীর ছাড়পত্র প্রদান সংক্রান্ত বিষয় বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে।
মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসার অধিকার
১৭। (১) অভিভাবক বা আত্মীয়বিহীন বা ঠিকানাবিহীন মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট এলাকার এখতিয়ার- সম্পন্ন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি নিকটতম সরকারি মানসিক হাসপাতাল প্রধানের নিকট হস্তান্তর করিবে।(২) কোনো ব্যক্তি মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত বলিয়া ধারণা করিবার কারণ থাকিলে এবং মানসিক অসুস্থতার কারণে উক্ত ব্যক্তিকে বিপজ্জনক বলিয়া মনে করিবার কারণ থাকিলে স্থানীয় অধিক্ষেত্রের পুলিশ অফিসার তাহাকে স্বীয় জিম্মায় গ্রহণ করিয়া নিকটতম মানসিক হাসপাতালে প্রেরণ করিবে।(৩) উপ-ধারা (১) এবং (২) অনুযায়ী হস্তান্তরিত মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট মানসিক হাসপাতাল অনতিবিলম্বে উপযুক্ত চিকিৎসা প্রদানপূর্বক প্রমাণক কাগজপত্রের অনুলিপি সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় অধিক্ষেত্রের থানাকে সরবরাহ করিবে।
১৮। (১) অভিভাবক বা আত্মীয়বিহীন বা ঠিকানাবিহীন মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির সুস্থতার পর সংশ্লিষ্ট মানসিক হাসপাতাল তাহার সুস্থতার ছাড়পত্রসহ উক্ত ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট জেলার অথবা নিকটতম সমাজসেবা প্রতিষ্ঠানে অথবা পুনর্বাসন কেন্দ্রে স্থানান্তর করিবে।(২) উপ-ধারা (১) এ বর্ণিত ব্যক্তির সুস্থতা পরবর্তী চিকিৎসা সেবা (Follow-up treatment) সংশ্লিষ্ট মানসিক হাসপাতাল প্রদান করিবে।(৩) উপ-ধারা (১) এ বর্ণিত প্রতিষ্ঠান বা কেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে সংক্ষুব্ধ হইলে মানসিক স্বাস্থ্য রিভিউ ও মনিটরিং কমিটির নিকট প্রতিকারের জন্য আবেদন করিতে পারিবে।
মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির পুনর্বাসন সংক্রান্ত কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা
১৯। (১) আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির পুনর্বাসনের অধিকার নিশ্চিতকরণে সরকারের পূর্বানুমতি সাপেক্ষে পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা করা যাইবে।(২) উপ-ধারা (১) এ বর্ণিত পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয়াদি বিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হইবে।
২০। (১) মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির কোনো অভিভাবক বা আত্মীয় উক্ত ব্যক্তির মানসিক অবস্থা নিরূপণের জন্য আদালতে আবেদন করিতে পারিবে।(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন আবেদন প্রাপ্তির পর আদালত কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসারকে সময়সীমা নির্ধারণপূর্বক মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত হিসাবে অভিযুক্ত ব্যক্তির মানসিক অক্ষমতা চিহ্নিত ও যাচাই করিয়া প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদেশ প্রদান করিতে পারিবে।(৩) উপ-ধারা (২) এর অধীন আদেশ প্রাপ্তির পর দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসার অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নির্ধারিত সময় ও স্থানে হাজির করিবার জন্য আবেদনকারীসহ সংশ্লিষ্টকে নোটিশ প্রদান করিবে :তবে শর্ত থাকে যে, অভিযুক্ত ব্যক্তি মহিলা হইলে এবং ধর্ম বা প্রথানুযায়ী জনসম্মুখে উপস্থিত হইবার বাধা থাকিলে, আদালত সুবিধাজনক স্থানে তাহাকে পরীক্ষার ব্যবস্থা করিবে।(৪) অনুসন্ধান সমাপ্তির পর দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসার প্রতিবেদন দাখিল করিলে আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তির মানসিক সুস্থতা এবং সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের সক্ষমতার বিষয়ে আদেশ প্রদান করিবে।(৫) উপ-ধারা (৪) এর অধীন প্রদত্ত আদেশের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ হইলে উচ্চতর আদালতে আপিল দায়ের করা যাইবে।ব্যাখ্যা: এই ধারায় ‘মানসিক অক্ষমতা (Mental disability)’ বলিতে কোনো ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কে কোনো ব্যক্তির ধারণা লাভের অসমর্থতাকে বুঝাইবে।
২১। (১) আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর ও সম্পত্তির অভিভাবক হইবে তাহার পিতা বা মাতা।(২) মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির পিতা ও মাতার অবর্তমানে তাহার বা তাহার আত্মীয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত উপযুক্ত ব্যক্তিকে অভিভাবক নিযুক্ত করিবে :তবে শর্ত থাকে যে, মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য যৌক্তিক কারণে কল্যাণকর বিবেচিত না হইলে কোনো আত্মীয়কে অভিভাবক নিযুক্ত করা যাইবে না।(৩) অভিভাবকের দায়িত্ব ও কর্তব্য সংক্রান্ত বিষয়াবলি বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে।(৪) অভিভাবক উপ-ধারা (৩) এ বর্ণিত দায়িত্ব পালনে অবহেলা করিলে বা অবহেলার প্ররোচনার সহিত জড়িত মর্মে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হইলে, স্থানীয় অধিক্ষেত্রের পুলিশ অফিসার বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ম্যাজিস্ট্রেটকে লিখিতভাবে অবহিত করিবে।
মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ
২২। (১) যেই ক্ষেত্রে মানসিক হাসপাতালে ভর্তির পর কোনো মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির মানসিক অক্ষমতার কারণে অথবা অন্য কোনো কারণে তাহার সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণে সক্ষম না হন, সেইক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসার তাহার অভিভাবক বা আত্মীয়কে সম্পত্তির ক্ষতির সম্ভাবনা সম্পর্কে অবহিত করিবে।(২) উপ-ধারা (১) অনুযায়ী অবগত হইবার পর মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির অভিভাবক বা আত্মীয় কোনো ব্যবস্থা গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করিলে দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসার আদালতের নিকট উক্ত সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যবস্থাপক নিয়োগের আবেদন করিবার ব্যবস্থা করিবে।(৩) দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসারের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের নিকট যদি প্রতীয়মান হয় যে, মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তি তাহার সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণে অক্ষম, এবং তাহার পিতা বা মাতা জীবিত নাই, তাহা হইলে আদালত একজন উপযুক্ত ব্যক্তিকে অনধিক ৩ (তিন) বৎসর মেয়াদে ব্যবস্থাপক নিযুক্ত করিবে।(৪) ব্যবস্থাপক দায়িত্ব গ্রহণের ৬ (ছয়) মাসের মধ্যে মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব ও তালিকা আদালতে পেশ করিবে।(৫) ব্যবস্থাপক মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির পক্ষে তাহার সম্পত্তি গ্রহণ, ব্যবস্থাপনা, নিয়ন্ত্রণ, ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা, অংশীদারি কারবার অবসান এবং এতদসংক্রান্ত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে:তবে শর্ত থাকে যে, ব্যবস্থাপক আদালতের অনুমতি ব্যতীত মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির কোনো স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক, হস্তান্তর, বিক্রয়, ভাড়া, উপহার, বিনিময় করিতে অথবা ৫ (পাঁচ) বৎসরের ঊর্ধ্বে উক্ত সম্পত্তি লিজ প্রদান করিতে পারিবে না।(৬) ব্যবস্থাপক প্রত্যেক আর্থিক বৎসর সমাপ্তির ৩ (তিন) মাসের মধ্যে তাহার দায়িত্বে থাকা সম্পত্তি ও সম্পদ, গৃহীত অর্থ এবং উক্ত ব্যক্তির মানসিক অসুস্থতার চিকিৎসায় ব্যয়কৃত অর্থের পরিমাণ এবং স্থিতির হিসাব সংশ্লিষ্ট আদালতের নিকট পেশ করিবে।(৭) মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির কোনো অভিভাবক বা আত্মীয় ব্যবস্থাপকের নিকট হইতে অথবা তাহার অপসারণের পর দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তির নিকট হইতে অথবা তাহার মৃত্যুর পর বৈধ প্রতিনিধির নিকট হইতে তাহার অধীনে থাকা অথবা তৎকর্তৃক গৃহীত কোনো সম্পত্তির হিসাব প্রাপ্তির জন্য আদালতে আবেদন করিতে পারিবে।(৮) ব্যবস্থাপক মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসার চলতি ব্যয় এবং তাহার সম্পত্তি বা সম্পদ তত্ত্বাবধানের জন্য প্রয়োজনীয় আনুমানিক ব্যয় ব্যতীত অবশিষ্ট অর্থ প্রজাতন্ত্রের সরকারি হিসাবে জমা প্রদান করিবে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মানসিক অসুস্থতা হইতে আরোগ্য লাভ করিলে তিনি উক্ত জমাকৃত অর্থ ফেরৎ পাওয়ার অধিকারী হইবেন।(৯) ব্যবস্থাপক আদালতের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তাহার আইনগত উত্তরাধিকারগণের স্বার্থে উক্ত অর্থ অন্য কোনোরূপে বিনিয়োগপূর্বক সকল লেনদেনের হিসাব উপ-ধারা (৪) অনুযায়ী পেশ করিবে।(১০) যেই ক্ষেত্রে আদালতের নিকট প্রতীয়মান হয় যে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মানসিক অসুস্থতা হইতে আরোগ্য লাভ করিয়াছেন, সেইক্ষেত্রে আদালত উক্ত ব্যক্তির মানসিক সুস্থতা সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রদানের জন্য একজন মানসিক রোগবিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে অন্যূন ৩ (তিন) সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠনপূর্বক অনুসন্ধানের নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবে।(১১) মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির অভিভাবক এবং তাহার সম্পত্তির ব্যবস্থাপক উভয়ই আদালত কর্তৃক নির্ধারিত হারে পারিশ্রমিক প্রাপ্য হইবে।(১২) আদালত কর্তৃক উপযুক্ত বিবেচিত হইলে ব্যবস্থাপক বা অভিভাবক অপসারণ বা মেয়াদ বৃদ্ধি বা পুনঃনিয়োগের কার্যক্রম গৃহীত হইবে।(১৩) মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি আদালত কর্তৃক পরিত্যক্ত মর্মে বিবেচিত হইলে উহা সরকারি ব্যবস্থাপনায় হস্তান্তরের আদেশ প্রদান করিতে পারিবে।
২৩। (১) মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত পেশাজীবী হিসাবে কোনো ব্যক্তি মানসিক অসুস্থতা সম্পর্কিত বিষয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মিথ্যা সার্টিফিকেট প্রদান করিলে অনধিক ৩ (তিন) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা ১ (এক) বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবে।(২) অভিভাবক বা ব্যবস্থাপক মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা বা সম্পত্তির তালিকা প্রণয়ন বা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে অবহেলা বা আদালতের কোনো নির্দেশ বাস্তবায়ন না করিলে অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে বা ৩ (তিন) বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবে।(৩) কোনো ব্যক্তি এই আইনের অন্য কোনো বিধান বা উহার অধীন প্রণীত কোনো বিধি লঙ্ঘন বা লঙ্ঘনে সহযোগিতা বা প্ররোচনা বা আইনে প্রতিপালনযোগ্য বিষয়াদি বা সরকারের কোনো আদেশ বা নির্দেশ প্রতিপালন না করা বা প্রতিপালন না করায় সহযোগিতা বা বাধা প্রদান করিলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে বা ৬ (ছয়) মাস কারাদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবে।
২৪। (১) ধারা ২৩ এর অধীন অপরাধসমূহ ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক বিচার্য হইবে।(২) ফৌজদারি কার্যবিধিতে ভিন্নতর যাহা কিছুই থাকুক না কেন, সরকার বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তার লিখিত প্রতিবেদন ব্যতীত উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত কোনো ম্যাজিস্ট্রেট এই আইনের ধারা ২৩ এর অধীন কোনো অপরাধ আমলে গ্রহণ করিবে না।(৩) এই আইনের অন্যান্য বিধানাবলী সাপেক্ষে, ধারা ২৩ এর অধীন অপরাধ সংক্রান্ত মামলা দায়ের, অপরাধের তদন্ত, বিচার ও অন্যান্য কার্যক্রম ফৌজদারি কার্যবিধির অধীন পরিচালিত হইবে, এবং উক্ত অপরাধসমূহ অ-আমলযোগ্য (Non-Cognizable), আপোসযোগ্য (compoundable) এবং জামিনযোগ্য (Bailable) হইবে।(৪) ফৌজদারি কার্যবিধিতে ভিন্নতর যাহা কিছুই থাকুক না কেন, উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত ম্যাজিস্ট্রেট ধারা ২৩ এ উল্লিখিত অর্থদণ্ড আরোপ করিতে পারিবে।ব্যাখ্যা: এই ধারায় ‘ফৌজদারি কার্যবিধি’ বলিতে Code of Criminal Procedure, 1898 (Act No. V of 1898) কে বুঝাইবে।
২৫। (১) এই আইনের অন্যান্য বিধানাবলীতে ভিন্নতর যাহা কিছুই থাকুক না কেন, সরকার, ধারা ৯ ও ১০ এ উল্লিখিত উহার যে কোনো ক্ষমতা, তৎকর্তৃক নির্ধারিত শর্তে বা এলাকায়, মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ (২০০৯ সনের ৫৯ নং আইন) এর অধীন পরিচালিত এক বা একাধিক মোবাইল কোর্টকে অর্পণ করিতে পারিবে।(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে, মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ (২০০৯ সনের ৫৯ নং আইন) এর বিধানাবলী প্রযোজ্য হইবে।
২৬। (১) আইনের কোনো বিধান লঙ্ঘনকারী সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি বা সমিতি বা সংগঠন হইলে উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক পরিচালক বা অংশীদার বা পরিচালনা পর্ষদের সদস্য বা ব্যবস্থাপক বা সচিব বা অন্য কোনো কর্মকর্তা বা এজেন্ট ব্যক্তিগতভাবে বিধানটি লঙ্ঘন করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে, যদি না তিনি প্রমাণ করিতে সক্ষম হন যে উক্ত অপরাধ তাহার অজ্ঞাতসারে সংঘটিত হইয়াছে এবং উহা রোধ করিবার জন্য তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়াছেন।(২) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত কোম্পানি বা সংস্থা আইনগত সত্ত্বা হইলে, উক্ত উপ-ধারায় উল্লিখিত ব্যক্তিকে অভিযুক্ত ও দোষী সাব্যস্ত করা ব্যতিরেকেও উক্ত কোম্পানিকে আলাদাভাবে একই কার্যধারায় অভিযুক্ত ও দোষী সাব্যস্ত করা যাইবে, তবে ফৌজদারি মামলায় কেবল অর্থদণ্ড আরোপ করা যাইবে।
২৭। সরকার, এই আইনের অধীন উহার যে কোনো ক্ষমতা বা দায়িত্ব, তৎকর্তৃক নির্ধারিত শর্তে, উহার নিয়ন্ত্রণাধীন কোনো দপ্তর, পরিদপ্তর বা অধিদপ্তর বা কমিটি বা এক বা একাধিক কর্মকর্তাকে অর্পণ করিতে পারিবে।
২৮। এই আইনের অধীন যে কোনো কর্মকাণ্ড সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার প্রয়োজনে সরকার এক বা একাধিক কমিটি গঠন এবং উহার কার্যপরিধি ও কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করিতে পারিবে।
৩০। (১) এই আইন বলবৎ হইবার সঙ্গে সঙ্গে ( Lunacy Act, 1912 (Act IV of 1912) এতদ্দ্বারা রহিত হইবে।(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন রহিতকরণ সত্ত্বেও রহিত Act এর অধীন সূচীত কোনো কার্যক্রম এই আইনের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে এমনভাবে চলমান ও অব্যাহত থাকিবে যেন উক্ত Act রহিত হয় নাই।
৩১। (১) এই আইন প্রবর্তনের পর সরকার, সরকারি গেজেটে, প্রজ্ঞাপন দ্বারা এই আইনের মূল বাংলা পাঠের ইংরেজিতে অনূদিত একটি নির্ভরযোগ্য পাঠ (Authentic English Text) প্রকাশ করিবে।(২) বাংলা ও ইংরেজি পাঠের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে বাংলা পাঠ প্রাধান্য পাইবে।