যেহেতু সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, ২০১১ (২০১১ সনের ১৪ নং আইন) দ্বারা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হইতে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সামরিক ফরমান দ্বারা জারীকৃত অধ্যাদেশসমূহের অনুমোদন ও সমর্থন সংক্রান্ত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের চতুর্থ তপশিলের ৩ক ও ১৮ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত হয় এবং সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল নং-১০৪৪-১০৪৫/২০০৯ এ বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত রায়ে সামরিক আইনকে অসাংবিধানিক ঘোষণাপূর্বক উহার বৈধতা প্রদানকারী সংবিধান (পঞ্চম সংশোধন) আইন, ১৯৭৯ (১৯৭৯ সনের ১ নং আইন) বাতিল ঘোষিত হওয়ায় উক্ত অধ্যাদেশসমূহের কার্যকারিতা লোপ পায়; এবংযেহেতু ২০১৩ সনের ৬ নং আইন দ্বারা উক্ত অধ্যাদেশসমূহের মধ্যে কতিপয় অধ্যাদেশ কার্যকর রাখা হয়; এবংযেহেতু উক্ত অধ্যাদেশসমূহের আবশ্যকতা ও প্রাসঙ্গিকতা পর্যালোচনা করিয়া আবশ্যক বিবেচিত অধ্যাদেশসমূহ সকল অংশীজন এবং সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মতামত গ্রহণ করিয়া প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিমার্জনক্রমে সময়ের চাহিদার প্রতিফলনে বাংলায় নূতন আইন প্রণয়ন করিবার জন্য সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছে; এবংযেহেতু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৩৭, ১৩৮ ও ১৪০ অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে বিধান করা সমীচীন; এবংযেহেতু সরকারের উপরি-বর্ণিত সিদ্ধান্তের আলোকে Bangladesh Public Service Commission Ordinance, 1977 (Ordinance No. LVII of 1977) রহিতপূর্বক যুগোপযোগী করিয়া পুনঃপ্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়;সেহেতু এতদ্দ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইল :-
২। বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থি কোনো কিছু না থাকিলে, এই আইনে,-(১) “কমিশন” অর্থ ধারা ৩ এর অধীন প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশন;(২) ”পরীক্ষা” অর্থ কমিশন কর্তৃক পরিচালিত কোনো পরীক্ষা;(৩) “পরীক্ষার হল” অর্থ কমিশন কর্তৃক ঘোষিত কোনো পরীক্ষার হল;(৪) “পরীক্ষার্থী” অর্থ কমিশন কর্তৃক গৃহীতব্য কোনো পরীক্ষার প্রবেশপত্র যে ব্যক্তির অনুকূলে ইস্যু করা হইয়াছে সেই ব্যক্তি;(৫) “সদস্য” অর্থ কমিশনের কোনো সদস্য; এবং(৬) “সভাপতি” অর্থ কমিশনের সভাপতি।
৩। (১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে Bangladesh Public Service Commission Ordinance, 1977 (Ordinance No. LVII of 1997) এর অধীন প্রতিষ্ঠিত Bangladesh Public Service Commission, বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশন নামে অভিহিত হইবে এবং উহা এইরূপভাবে বহাল থাকিবে যেন উহা এই আইনের অধীন প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে।(২) একজন সভাপতি এবং অন্যূন ৬ (ছয়) জন ও অনধিক ২০ (বিশ) জন সদস্য সমন্বয়ে কমিশন গঠিত হইবে।
৪। কমিশনের দায়িত্ব হইবে নিম্নরূপ, যথা :-(ক) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪০ অনুচ্ছেদে বর্ণিত দায়িত্ব এবং উক্ত অনুচ্ছেদের দফা (২) এর অধীন প্রণীত কোনো প্রবিধানের অধীন প্রদত্ত দায়িত্ব পালন; এবং(খ) আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইন দ্বারা নির্ধারিত দায়িত্ব পালন।
৫। আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইন বা এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, নিম্নবর্ণিত কোনো পদে নিয়োগ এবং তদসম্পর্কিত কোনো বিষয়ে কমিশনের পরামর্শ গ্রহণ আবশ্যক হইবে না, যথা :-(ক) কোনো বিভাগীয় অফিস, জেলা অফিস বা অধঃস্তন অফিসের কোনো পদ, যাহাতে উক্ত অফিসের প্রধান বা অফিসের অন্য কোনো কর্মকর্তা কর্তৃক নিয়োগ প্রদান করা হয়; এবং(খ) কোনো আইন দ্বারা কমিশনের আওতা বহির্ভূত রাখা হইয়াছে এইরূপ কোনো চাকরি বা পদে নিয়োগদান।ব্যাখ্যা।- এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, “বিভাগীয় অফিস”, “জেলা অফিস” ও “অধঃস্তন অফিস” অর্থ সরকার কর্তৃক, সময় সময়, আদেশ দ্বারা, উক্তরূপ অফিস হিসাবে ঘোষিত কোনো অফিস।
৬। (১) কমিশনের একটি সচিবালয় থাকিবে যাহা বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশন সচিবালয় নামে অভিহিত হইবে।(২) কমিশন সচিবালয়ের একজন সচিব থাকিবেন, যিনি সরকারের সচিবগণের মধ্য হইতে নিযুক্ত হইবেন।(৩) কমিশন সচিবালয়ের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ সভাপতির উপর ন্যস্ত থাকিবে এবং সচিব কমিশন সচিবালয়ের প্রশাসনিক প্রধান হইবেন।(৪) কমিশন সচিবালয় কমিশনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল সাচিবিক দায়িত্ব পালন করিবে এবং কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত অন্যান্য কার্যসম্পাদন করিবে।
৮। এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, কমিশন উহার দায়িত্ব পালনের নিমিত্ত কোনো ব্যক্তি, কর্তৃপক্ষ বা প্রতিষ্ঠানকে সহায়তার জন্য অনুরোধ করিতে পারিবে এবং তদনুসারে উক্ত ব্যক্তি, কর্তৃপক্ষ বা প্রতিষ্ঠান সহায়তা প্রদান করিবে।
১০। কোনো ব্যক্তি পরীক্ষার্থী না হওয়া সত্ত্বেও নিজেকে পরীক্ষার্থী হিসাবে হাজির করিয়া বা পরীক্ষার্থী বলিয়া ভান করিয়া বা মিথ্যা তথ্য প্রদান করিয়া পরীক্ষার সময় পরীক্ষার হলে প্রবেশ করিলে বা অন্য কোনো ব্যক্তির নামে বা কোনো কল্পিত নামে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করিলে উহা হইবে একটি অপরাধ এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ২ (দুই) বৎসরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
পরীক্ষার পূর্বে প্রশ্নপত্র প্রকাশ বা বিতরণ ও উহার দণ্ড
১১। কোনো ব্যক্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে এইরূপ পরীক্ষার জন্য প্রণীত কোনো প্রশ্ন সংবলিত কাগজ বা তথ্য, পরীক্ষার জন্য প্রণীত হইয়াছে বলিয়া মিথ্যা ধারণাদায়ক কোনো প্রশ্ন সংবলিত কাগজ বা তথ্য অথবা পরীক্ষার জন্য প্রণীত প্রশ্নের সহিত হুবহু মিল রহিয়াছে বলিয়া বিবেচিত হওয়ার অভিপ্রায়ে কোনো প্রশ্ন সংবলিত কাগজ বা তথ্য যেকোনো উপায়ে ফাঁস, প্রকাশ বা বিতরণ করিলে উহা হইবে একটি অপরাধ এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ১০(দশ) বৎসরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
১২। কোনো ব্যক্তি কোনো পরীক্ষা সংক্রান্ত উত্তরপত্র বা এর অংশবিশেষের পরিবর্তে অন্য কোনো উত্তরপত্র বা এর অংশ প্রতিস্থাপন করিলে অথবা পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষার্থী কর্তৃক লিখিত হয় নাই এইরূপ উত্তর সংবলিত অতিরিক্ত পৃষ্ঠা কোনো উত্তরপত্রের সহিত সংযোজন করিলে উহা হইবে একটি অপরাধ এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ২ (দুই) বৎসরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
১৩। কোনো ব্যক্তি কোনো পরীক্ষার্থীকে কোনো লিখিত উত্তর, বই, লিখিত কাগজ, পৃষ্ঠা বা উহা হইতে কোনো উদ্ধৃতি পরীক্ষার হলে সরবরাহ করিলে অথবা মৌখিকভাবে বা যান্ত্রিক কোনো ডিভাইসের মাধ্যমে বা অন্য কোনো উপায়ে কোনো প্রশ্নের উত্তর লিখিবার জন্য সহায়তা করিলে উহা হইবে একটি অপরাধ এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ২ (দুই) বৎসরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
১৪। কোনো ব্যক্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত কোনো দায়িত্ব পালনে বাধ্য প্রদান করিলে বা পরীক্ষা অনুষ্ঠানে বাধা প্রদান করিলে বা কোনো পরীক্ষার হলে গোলযোগ সৃষ্টি করিলে উহা হইবে একটি অপরাধ এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ১ (এক) বৎসরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী কর্তৃক অপরাধ সংঘটনে সহায়তার দণ্ড
১৫। পরীক্ষা পরিচালনার কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মচারী এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করিলে, তিনি যে ধারার অধীন অপরাধ সংঘটনের সহায়তা করিবেন সেই ধারায় বর্ণিত দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।ব্যাখ্যা :- এই ধারা উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, “দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী” অর্থ কমিশন কর্তৃক গৃহীত কোনো পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি।
১৬। এই আইনের অধীন কোনো অপরাধের অভিযোগ দায়ের, তদন্ত, বিচার, আপিল এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে Code of Criminal Procedure, 1898 (Act No. V of 1898) এর বিধানাবলি প্রযোজ্য হইবে।
১৮। ধারা ১১ এ বর্ণিত অপরাধ ব্যতীত ধারা ১০, ১২, ১৩ ও ১৪ এ বর্ণিত অপরাধসমূহ মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ (২০০৯ সনের ৫৯ নং আইন) এর তপশিলভুক্ত হওয়া সাপেক্ষে, মোবাইল কোর্ট কর্তৃক বিচার্য হইবে।
২০। (১) Bangladesh Public Service Commission Ordinance, 1977, অতঃপর উক্ত Ordinance বলিয়া উল্লিখিত, এতদ্দ্বারা রহিত করা হইল।(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন রহিতকরণ সত্ত্বেও-(ক) উক্ত Ordinance এর অধীন কৃত কোনো কাজ বা গৃহীত কোনো ব্যবস্থা, জারীকৃত কোনো প্রজ্ঞাপন, ইস্যুকৃত কোনো আদেশ, বিজ্ঞপ্তি, নির্দেশ, প্রদত্ত কোনো নোটিশ এই আইনের অধীন কৃত, গৃহীত, প্রণীত, জারীকৃত এবং প্রদত্ত বলিয়া গণ্য হইবে; এবং(খ) চলমান কোনো কার্যক্রম এই আইনের অধীন নিষ্পন্ন করিতে হইবে।(৩) উক্ত Ordinance রহিত হইবার সঙ্গে সঙ্গে উক্ত Ordinance এর অধীন প্রতিষ্ঠিত Bangladesh Public Service Commission এর-(ক) অধীন নিযুক্ত সভাপতি এবং সদস্যগণ কমিশনের সভাপতি এবং সদস্যগণ হিসেবে গণ্য হইবেন এবং এই আইন প্রবর্তনের পূর্বে সভাপতি ও সদস্যগণ যে মেয়াদ ও শর্তাধীনে কমিশনে নিযুক্ত হইয়াছিলেন সেই একই শর্তাধীনে অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য কমিশনের সভাপতি ও সদস্য হিসাবে নিযুক্ত থাকিবেন;(খ) সকল সম্পদ, হিসাব বহি, রেজিস্টার, রেকর্ডপত্র এবং অন্যান্য দলিলপত্র কমিশনের নিকট হস্তান্তরিত ও উহার উপর ন্যস্ত হইবে;(গ) সকল দায়-দায়িত্ব ও গৃহীত বাধ্যবাধকতা কমিশনের দায়-দায়িত্ব ও বাধ্যবাধকতা বলিয়া গণ্য হইবে; এবং(ঘ) বিরুদ্ধে বা তৎকর্তৃক দায়েরকৃত কোনো মামলা অনিষ্পন্ন বা চলমান থাকিলে উহা এই আইনের অধীন নিষ্পন্ন করিতে হইবে।
২১। (১) এই আইন কার্যকর হইবার পর সরকার, সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইনের মূল বাংলা পাঠের ইংরেজিতে অনূদিত একটি নির্ভরযোগ্য পাঠ (Authentic English Text) প্রকাশ করিতে পারিবে।(২) মূল বাংলা পাঠ এবং ইংরেজি পাঠের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে বাংলা পাঠ প্রাধান্য পাইবে।